নতুন
কিছু ভাবো, নতুন কিছু করো
পর্তুগালে
একটি কথা খুব প্রচলিত - 'নতুন
কিছু ভাবো, নতুন
কিছু করো, তা
না-হলে পৃথিবী তোমাকে পুরনো মনে করে ডাস্টবিনে ফেলে দেবে।' আগামী দিনগুলো তিনটি
বিষয়ের উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল হবে: গবেষণা, টেকনোলজি ও নতুন ভাবনা।
আমরা যে- ক্ষেত্রেই থাকিনা কেন, নতুন ভাবনা দ্বারা ভাবিত বা চালিত
না হলে টিকে থাকা বা এগিয়ে যাওয়া কষ্টকর হবে। কিন্তু, আমরা সাধারণত
গড্ডালিকায় গা ভাসাতে ভালোবাসি। সিলেবাস বা রুটিনের বাইরে যেতে সাহস পাই না। Something
will come out of something, nothing will come out of nothing. অর্থাৎ- কিছু করলে কিছু
হয়, আর
কিছু না-করলে কিছুই হয় না। কিছু একটা করা যাক। নতুন বছরে আমরা আবার নতুনভাবে
কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে পারি, যা, আমাদের জীবনটাকে আরো
ভালো রাখতে পারে।
প্রথমত:
রাগ এসিডের মতো। অ্যাসিড যে-পাত্রে থাকে তার ক্ষতি হয়। একইরকমভাবে যিনি রাগেন বা
বিরক্তি প্রকাশ করেন, তাঁর
নিজের বেশি ক্ষতি হয়। এই পৃথিবীতে যে-সব ধ্বংস বা ক্ষতিসাধন কাজ হয়েছে, হয় বা হয়ে থাকে, তা মুখ্যত রাগ-প্রসূত
প্রতিক্রিয়ার ফল। রাগ এবং ঝড়ের মধ্যে অনেক মিল আছে। এরা দুজনেই শান্ত হলে বোঝা
যায়, এরা
কি ক্ষতি করে গেল। তাই আমরা যদি একটু রাগ কে সংযত রাখার বা কাউকে না-রাগানোর
চেষ্টা করি, বা
ক্রিকেটার ধনির মতো অনুকুল বা প্রতিকুল এই দুই পরিস্থিতিতেই, কুল-কুল থাকার প্রয়াসী
হই, তাহলে
আমার এবং পাশের জগৎটা যথেষ্ট ভালো লাগতে পারে। আগে নিজের শাসন, পরে অনুশাসন। নিজের এবং
নিজের বাড়ি দিয়েই শুরু হোক। বাড়িটাকে আমরা প্রথমে No
Anger Zone তৈরি
করি। বাড়ির সমস্ত সদস্যরা চেষ্টা করব রাগ- না-করার জন্য বা রাগলেও তা সংযত রাখার
চেষ্টা করব।
দ্বিতীয়তঃ
আমাদের কষ্ট পাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হল, আমরা সবসময় অপরের
সঙ্গে তুলনা করে সুখ খুঁজে থাকি। নিজের যেটুকু আছে বা যা-পেয়েছি, তাতে সন্তুষ্ট হওয়ার
চেষ্টা করি না। সুখ মানেই তুলনা! সুখ মানেই দ্যাখো, তুমি বা তোমরা! আমি
কিন্তু তোমার বা তোমাদের থেকে অনেক ভালো আছি! - দ্যাখো, আমার এটা-ওটা আছে, যা, তোমার বা তোমাদের
কিন্তু নেই! তুলনা সবসময় নিজের সঙ্গে হওয়া উচিত। এক বছর আগে আমি কেমন ছিলাম, আগামী এক বছর বা দুই
বছর পরে আমি কেমন থাকবো। নিজের সঙ্গে তুলনা করলে কখনো কষ্ট হয় না, অর্থাৎ আত্মতৃপ্ত হতে
শেখায়। আগামী বছর থেকে চেষ্টা করা যাক নিজের সঙ্গে তুলনা এবং নিজের যা-আছে তাতেই
সন্তুষ্ট থাকতে।
তৃতীয়তঃ
'আমি
ও আমার' - এই ভাবনা থেকে সরে এসে 'আমরা ও আমাদের' - এই চিন্তায় চালিত হই।
পৃথিবীর সবথেকে স্বার্থপর শব্দ হল - 'আমি'। কারণ, 'আমি' সবসময় কিছু
চাওয়া-পাওয়া ও প্রত্যাশার মুডে থাকে। আর সেটা না পেলেই অসন্তুষ্ট ও বিব্রত হই।
কথাই বলে - if I is replaced by WE, illness becomes Wealness. অর্থাৎ - 'আমি' থেকে 'আমরাই' পরিবর্তিত হলে যে কোনো
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি, প্রীতিকর
বা শুভঙ্কর অবস্থায় পরিণত হয়। স্বামী বিবেকানন্দ মনে করতেন - হৃদয় সংকোচনে হল
মরণ; আর
হৃদয়ের প্রসারণই জীবন। এই একই ভাবনা দীপক চোপড়া, যাকে আমেরিকায় 'স্পিরিচুয়াল গুরু' মনে করা হয়, মনে করেন 'কন্ট্রাক্টেড আওয়ার্নেস' ও 'এক্সপান্ডেড আওয়ার্নেস'। তিনি তাঁর বিখ্যাত বই
- "Healing by Spiritual Solutions"-এ বলেন যে, আমাদের সমস্যার মূল
কারণ এই 'কন্ট্রাক্টেড
অ্যাওয়ারনেস' বা
হৃদয় সংকোচনের এর জন্য। আমাদের সচেতনতা বা আওয়ার্নেস একটু এক্সপান্ড অর্থাৎ
সচেতনতার একটু প্রসারণ করলেই সমস্যার সমাধান সহজেই হয়। সুতরাং, আগামী দিনগুলো 'আমি-আমার' থেকে সরে এসে 'আমরা-আমাদের' - এই ভাবনায় ভাবিত ও
চালিত, এবং
লাভিং-হেলপিং- শেয়ারিং-কেয়ারিং - এই মুড ও মোডে থাকলে আমার জীবন ও পাশের জগৎ সব
সময় আনন্দময় ও জ্যোৎস্নাময় বলে মনে হতে পারে।